বাংলাদেশ এক সময় বৌদ্ধ প্রধান দেশ ছিল। ইতিহাসের পাতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এদেশ আগে বৌদ্ধ রাজাগন রাজত্ব করতেন। তখনকার রাজাদের আমলে বৌদ্ধ ধর্ম সারা বাংলাদেশে বিস্তৃতি লাভ করে। একটা পর্যায়ে এসে বৌদ্ধ রাজাগন যখন অস্ত্র ত্যাগ করে ভগবান বুদ্ধের পথ অনুসরণ করে, মৈত্রীর দ্বারা রাজ্য পরিচালনা করতে শুরু করলেন তখন রাজ্যের মধ্যে নেমে আসে সুখের ছায়া ও একটা ধর্মীয় পরিবেশ । রাজা-প্রজা সকলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অনুরাগী হয়ে শাসন সদ্ধর্মের প্রচার-প্রসার করেন, যা খুব দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে । কিন্তু এহেন ধার্মিক ও অস্ত্রত্যাগী রাজাদের সরলতা বহিঃ রাজা-বাদশাহদের চোখে পড়ে । আর দেরি না করে, বহিঃশত্রু রাজাগন আক্রমণ করলেন এ অঞ্চলের বৌদ্ধ রাজাদের এবং অতি সহজে তাঁদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয় । ক্রমান্বয়ে সব বৌদ্ধ বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয়, বিহার ধ্বংস করা হয় । সে থেকে শুরু হল বৌদ্ধ ধর্মের পতন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক পুরাকীর্তি লক্ষ্য করা যায় । বিভিন্ন পুরকীর্তিতে প্রাপ্ত বুদ্ধমূর্তি এবং বোধিসত্ত্ব মূর্তি দেখেই বুঝা যায় এ অঞ্চলে এক সময় মহাযানীদের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। এক সময় তাও হারিয়ে গেল এবং শুরু হল থেরবাদী চর্চা । শুদ্ধ-অশুদ্ধ মিলিয়ে চলতে লাগল থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্মের চর্চা । এক সময় বার্মা থেকে মহান সংঘ মনীষা এসে এ অঞ্চলের ভিক্ষু সংঘকে বিনয়মতে শুদ্ধ করে বাংলাদেশের ভিক্ষুদের পরিশুদ্ধ ধর্ম আচরণের জন্য বিশেষ অবদান রেখে গেছেন যা বাংলাদেশের বৌদ্ধ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ । সেই আদর্শে এই অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার প্রসারে যুগ যুগ ধরে অনেক সংঘ মণীষা অবদান রেখে গেছেন। তাঁরই একজন দশম সংঘরাজ পন্ডিত জ্যোতিঃপাল মহাথের। তিনি তাঁর সারাজীবন শাসনের জন্য উৎসর্গ করে গেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান স্কুল, অনাথ আশ্রম, বিহার ও ভিক্ষু শিষ্য। তাঁরই প্রিয় শিষ্য ভদন্ত সুগতপ্রিয় থের। তিনি তাঁর শ্রামন্য জীবন থেকেই গুরুর সান্নিধ্য লাভ করেন। এবং গুরুর আদর্শকে নিজের জীবনে কাজে লাগাতে ভুল করেননি । গুরুদেবের মহাপ্রয়ানের উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যান বৌদ্ধ প্রতিরূপদেশ থাইল্যান্ডে । সেখানে অবস্থান করে লেখাপড়ার পাশাপাশি ভাবলেন, গুরুদেবের মত আমি কি অবদান রাখতে পারি বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মের জন্য । তিনি চিন্তা করলেন বাংলাদেশে অনেক বৌদ্ধ বিহার আছে কিন্তু যথেষ্ট বুদ্ধমূর্তি অভাব । অতএব সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার ও প্রসারের মানসে যে সমস্ত বিহারে বড় বুদ্ধমূর্তি নাই সেসব বিহারে দেব-মানবের ধর্মীয় অনুশীলনের জন্য বুদ্ধমূর্তি দান করবেন এবং এ পর্যন্ত প্রায় দুই শতের মত বড় বুদ্ধমূর্তি তিনি থাইল্যান্ড থেকে পাঠিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের টেকনাফ হতে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত থাইল্যান্ড থেকে আনীত বুদ্ধমূর্তির মধ্যে অধিকাংশই ভদন্ত সুগতপ্রিয় থেরর পাঠানো।
গ্যালারীঃ বড় বুদ্ধমূর্তি দান |